পরিবর্তন তো নিশ্চয়ই হয়েছে আর সেটা আগের থেকে ভালো না খারাপ তা জানি না তবে এই নতুন করে সেজে ওঠা শহরের চেয়ে আমি আমার চিন্তায় মননেযে শহরের অধিষ্ঠান সেইপুরোনো কুচবিহার কে নিয়ে বলা পছন্দ করবো।
আজ এই চল্লিশোর্ধ বয়সে পৌঁছে বুঝি জীবনের সবচেয়ে মধুর সময় হচ্ছে স্কুলজীবন ।সুনীতি একাডেমীর সেই দিনগুলি... আহা সত্যিই বড় ভালো ছিল।আমি,শাশ্বতী, স্মিতা ,মহুয়া, মানসী ,স্বর্নালী,অদীতি - একসাথে পড়তে যাওয়া ,আড্ডা মারা ।আমাদের এই সাতমূর্তি র কিন্তু সাতটি সম্পূর্ন ভিন্ন ঘরানা থেকে উঠে আসা ।প্রানগুলি কখন যে মিলেমিশে একহয়ে গিয়েছিলাম বুঝতেই পারিনি।তাইতো 'মান্না দে'র সুরে সুর মিলিয়ে বলতে ইচ্ছে করে "স্কুলজীবনের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই..." যদিও আমরা কিন্তু কেউই হারিয়ে যাই নি সকলের সাথে যোগাযোগ রেখেই বেঁচে আছি,বয়স বাড়ছে বাড়ুক কিন্তু মনের বয়সকে আমরা বাড়তে দিই নি।বর্তমানের পিঠে দাঁড়িয়ে সেইসোনালি অতীতকেসম্বল করে ভবিষ্যতেও আমাদেরবন্ধুত্ব অমলিন থাকবেআর সেই বন্ধুত্বের যোগসুত্রহয়ে থাকবে আমাদের সবার প্রিয় শহর কুচবিহার এই আশা রেখে আজ তবে এইটুকু থাক বাকি কথা পরে হবে ...
কুচবিহার মানে জীবন
কুচবিহার নামটা বললে প্রায় সকলেরই যে কথাটা প্রথম মনে আসে তা হচ্ছে রাজবাড়ি কিন্তু আমার কাছে কুচবিহার মানে জীবন।শুধু কুচবিহারের রাজবাড়িই নয় ,তার রাস্তাঘাট স্কুল কলেজ শহরের মাঝে অবস্হিত বেশ কয়েকটি দীঘি আর সর্বোপরি তোর্সা নদী এই সবকিছুর মাঝেআমি খুঁজে পাই জীবনের ছোঁয়া । কুচবিহার ছেড়েছি ২৫ বছর হয়েছে আর তার পর থেকে সেভাবে যাওয়াও হয়ে ওঠেনি কিন্তু এই শহরে জন্মেছি বলেই বোধহয় এইশহরটার সাথে আমার নাড়ীর থুড়ি ভূমির টান।আর আমার কুচবিহার মানে সেই ২৫ বছর আগের শান্ত নিরিবিলি শহর ।
কুচবিহারের স্মৃতি মানে শাড়ি পরে স্কুলে যাওয়া ,বান্ধবীদের সাথে কলকল করতে করতে সাগরদীঘির পারে হেঁটে বেড়ানো ( সেই সময় তো বান্ধবী মানে তো এখনকার ফেসবুক ফ্রেন্ডদেরমতো হাই-হ্যালো করা ফ্রেন্ড নয় ) ,বান্ধবীদের বাড়ীর লোকদেরসাথেও আত্মিক সম্পর্ক তৈরী হয়ে যেত আর তাইকারো বাড়ী যাওয়া মানে সারাদিন কাটিয়ে খাওয়াদাওয়া করে বাড়ী ফেরা।তখন এই ছোটো ছোটো ঘটনাগুলোর মূল্য বুঝতে পারিনি কারণ তখন ঐটাই স্বাভাবিক ছিলো কিন্তু আজকাল এই এতদিন পরে চারপাশের মেকি সামাজিকতা দেখলে আগের সময়টাকে স্বপ্নের জগৎ বলে মনে হয়।আরযেহেতু "রাতেরসব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে " তাই এতদিন পরেওআজ লিখতে বসেকত ছোট ছোট ঘটনা চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠছে । প্রতিদিন সাগরদীঘির পারে ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরীর "মনিদা"র হাত ধরে "সুনীল ,সমরেশ ,শীর্ষেন্দু ,বুদ্ধদেব ,নারায়ন স্যান্যাল "দের চিনে ওঠৃা ।মনিদা তখনই অনেক বয়স্ক ছিলেন এখন হয়তো আমাদের মাঝে আর নেই কিন্তু আজ যেটুকু সাহিত্য চর্চা করি তারজন্য মনিদার অবদান ও কম নয় ।আগে কখনো বলা হয়নি তাই আজ সুযোগ পেয়ে ঋণ স্বীকার করলাম ।
আমি এখন যদিও দুর্গাপুরেরস্হায়ী বাসিন্দা আর এটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল শহর এবং প্ল্যান মাফিক বানানো শহর বলে দুর্গাপুর অনেক বেশী ঝকঝকে তকতকে কিন্তু এখনো আমারপ্রিয় শহর কুচবিহার।সাগরদীঘির চারপাশের মনোরম সৌন্দর্য্য আমি আজঅবধি কোথাও দেখিনি।আজ অবধি প্রতি বছর মহালয়ার দিন আমরা (আমার বাবা ,মা ও বোনেরা )ভীষনভাবে মনে করি আমাদের প্রিয় শহরকে ।আমাদের এখানে তো মহালয়া বলতে বড়জোর রেডিওতে "মহিষাসুরমর্দিনী " শুনে আবার যে যার মত ডিউটিতে রওনা দেওয়া কারন ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্ট-এর মানুষজনদের কাছে মহালয়ার ছুটি আর সোনারপাথরবাটি দুটোই সমান ।কিন্তু এখন আর কেউযায় কিনা জানি না আমরা ছোটোবেলায় মহালয়ার দিন ভোরবেলা নতুন জামাকাপড় পরে প্রতিবছর নিয়ম করে দেবীবাড়ি যেতাম ।চারদিক থেকে রেডিওতে গান ভেসে আসত আর সাগরদীঘির পার লোকে লোকারন্য ।দেবীমূর্তির ঢাকা খুলে দেওয়া হত ।এ যেন উৎসবের আগেই আর এক উৎসব ।আর কোথাও এভাবে মহালয়ার উৎসব পালনকরা হয় বলে আমার জানা নেই । তোর্সা নদীর পারের মেয়ে আমি,যদিও বলে "আহাম্মকের চর নদীর ধারে ঘর" কিন্তু সারাবছর জুড়েনদীর নানান রূপের যে ছটা আমি দেখেছি আজ ঐ নদীর ধারে ঘর ছিলো বলে আমি গর্বিত।আসলে প্রত্যেকেরই ফেলে আসা ছেলেবলা মানে ্স্বপ্নের দিন কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তীকালেও রাজার দৌলতে যেহেতু কুচবিহার শহর তারএকটি আলাদা সত্তা বজায় রেখেছিলো তাই রাজার আমলের সৌন্দর্যায়ন অনেকদিন পর্যন্ত বজায় রাখা গিয়েছিলো।যদিও জানিনাআমার সেই সুখবিলাসের শহর এখন কেমন আছে !
আমাদের সাতমূর্তি : (বাঁদিক থেকে বসে অদীতি ,সুমিতা ,স্বর্নালী দাঁড়িয়ে মানসী ,শাশ্বতী ,স্মিতা ,মহুয়া )
Photo courtesy of Somenath Rudra