সন্ধ্যেবেলা ঠাকুর-ভাসানের আগে জামা-কাপড় বদলাতে এসে সমর্পণ দেখলো মধুজা ওর নতুন পাজামা-পাঞ্জাবী বের করে বিছানায় রেখে ব্যালকনির অন্ধকারে চুপ করে বসে আছে ।
কী ব্যাপার হানি-বানি! তৈরী হওনি যে?প্রসেশনে যাবে না ?
মধুজাকে এই নামেই ডাকে সমর্পণ।নিভৃতে ,নিরালায় ।
হঠাৎ সমর্পণকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে প্রায় লুটিয়ে পড়ে মধুজা ।
কী হয়েছে তোমার মধু ?তুমি তো কখনও এমন করে কাঁদো না !
জানো ওবাড়ির বাবলির মা আজ আবার ওকে ধরে মারছিল ।
কেন ?
মেয়েটা একটা দামী কাপ ভেঙে ফেলেছে বলে ।মেয়েটাযে চোখে দেখতে পায় না সেটা ওর মা বোঝে না কেন বলোতো ! ও দেখতে না পাক মা তো ডাকতে পারে ।ও যদি আমার কাছেও আসতো !আমি আর কবে মা ডাক...
কথা আর শেষ করতে পারে না মধুজা ।
সমর্পণ দুহাতে ওকে জড়িয়ে কাছে টেনে নেয় ।ওর মাথায় চিবুক রেখে অঝোর ধারায় ঝরতে থাকে সমর্পনের বাঁধ ভাঙা যত জমাট কান্না ।সমর্পণের ফেভারিট ব্লু টি-শার্টের বোতামগুলো একটা একটা করে খসতে থাকে সেই সাথে একটা একটা করে গুঁড়িয়ে যেতে থাকে সমর্পণের বুকের পাঁজর । থেমে থাকে সময় ।
কিছু মুহুর্তের জন্য নিঃশব্দ-বেদনায় একাকার হয়ে যায় মধুজা ও সমর্পণ ।ঢাকের কাঠির বিষণ্ণ সুরে ভরে ওঠে চারিদিক ।একটা একটা করে মণ্ডপ ফাঁকা হয়ে যায় ।
এই প্রথমবার ভাসানের প্রসেশনে নাচল না সমর্পণ ।সারাটা রাস্তা সে শুধু মায়ের দিকেই নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে থাকে ।জলে নেমে সবাই যখন চিৎকার করে ওঠে-আবার কবে? বছর পরে । দুর্গা ঠাকুর মা-ই কী জয় !
সমর্পণ তখন বলে ওঠে-তুমি আমার ঘরে আমার মেয়ে হয়ে এসো মা।
মায়ের চোখে সবাই যখন বিষাদের ছায়া দেখছিল ।সমর্পণের তখন মনে হল' মা' ওর দিকে তাকিয়ে যেন হাসতে হাসতে চলে গেলেন ।
Photo courtesy of Kuntal Goswami