তার ওপর এবার তাদের ক্লাব পঞ্চাশে পা রেখেছে কাজেই এই নিয়ে আড়ম্বরের আদিখ্যেতা একটু বেশীই যেন মাত্রা ছাড়িয়ে ফেলছে ।ইকনমিক্সের ছাত্রী মধুজার মন ও রুচিবোধ কিছুতেই এতে সায় দেয় না।ওর কেবলই মনে হয়-কত শিশু গরমভাতের গন্ধ যে কত দিন পায় না ! এরা প্যান্ডেল আর আলোকসজ্জায় যে টাকা খরচ করছে তাতে বেশ কয়েকশো বাচ্চাকে শ্লেট -পেন্সিল আর অল্প-বিস্তর নতুন জামা দেওয়া যেতেই পারত।
চুল আঁচড়াতে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় সমর্পণকে দেখে দাদার কথা মনে পড়ে গেল ।দাদা বায়োলজি প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার আগে ব্যাঙ ধরে এনে মাথার পেছনে needle pithing-করে অজ্ঞান করত।তারপর তাকে মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে চারটে পা মাটিতে পিন দিয়ে গেঁথে ব্যাঙ -কাটা প্র্যাক্টিস করত।সমর্পণ অবিকল সেই ভঙিতেই ঘুমোচ্ছে।ওর নাসিকা-নিঃসৃত cacophonyতে বেশীক্ষণ আর দাঁড়াতে ইচ্ছে করল না মধুজার সিঁড়ির কাছে এসে বাড়ির স্লিপার পাল্টে তাড়াতাড়ি বাজারের দিকে ছুটলো মধুজা।ব্রেকফাস্টে আজ আবার শাশুড়ীমায়ের ফরমান জারি হয়েছে লুচি,ছোলার ডাল আর আলুর দম যেন সার্ভ করা হয় ।সঙ্গে মধুজা ভেবেছিল শ্বশুরমশাইয়ের ফেভারিট কাজুর বরফিও রাখবে প্লেটে বরফির কথা ভাবতে গিয়েই মনে পড়ল মা-দূর্গাকে মিষ্টি মুখ করবার জন্য সন্দেশ নেওয়া হয় নি ।বাজার সেরে এসে মধুজা দেখলো সমর্পণ ঠিক একই posture-এ ঘুমোচ্ছে।মেজাজের পারদটা নামাবার জন্য এককাপ কোল্ড কফি খেয়ে মধুজা কিচেনে ঢুকলো ।
বিষাদ প্রতিমা
সমর্পণকে ঘুম থেকে ঠেলে তুলতে ব্যর্থ হয়ে মধুজা ড্রয়ার খুলে পার্স বের করে নিজেই বাজারে যাবে মনস্থ করল।এখনই না যেতে পারলে পুঁটি মাছের আধখানা লেজও আর বাজারে পড়ে থাকবে না।এমনিতেই আজ "বিজয়া দশমী ।পুঁটিমাছের আজ heavy demand...
'মা'কে ভাসিয়ে এসে সিঁদুর মাখানো আধা পচে যাওয়া পুঁটি মাছের নাকি দর্শন করতে হয় ! এর ওপর আবার 'মায়ের বরণ'এর জন্য নানা উপকরণ যোগাড় করতে হিমসিম খেতে হয় মধুজাকে ।দূর্বা,পানপাতা গোটা দুয়েক মাকে বরণ করবার জন্য আবার গোটা কয়েক খিলি করা দুর্গা ও তার সন্তান-সন্ততিদের মুঠো করা হাতের মধ্যে ঠেসে গুঁজে দেবার জন্য; ঠাকুমা-শাশুড়ির কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া গাছ কৌটোতে আবার বছর বছর ইদুঁরের মাটি,রূপোর টাকা,সিদুঁর,কাঁচা-হলুদ,পাট-পাতা সব পুরোনোউপকরণ ফেলে দিয়ে নতুন করে সব কিছু যোগাড় করে ভরে সেই কৌটোবরণ-ডালায় সাজিয়ে মা দুর্গার পায়ে ছোঁয়ানো এ বাড়ির রীতি।প্রতিটি জিনিস সময় মত গুছিয়ে না রাখলেই শাশুড়ীমায়ের বাঁকা বাঁকা কথা তার দিকে ধেয়ে আসবে।আজকাল্ ওনাকে কথা শোনাবার কোনো spaceই দিতে চায় না মধুজা।
সমর্পণ ক্লাবের সেক্রেটারী হওয়ায় বাড়ীর কোনো কাজেই আর দায়িত্ব নিতে চায় না।সবকিছু মধুজা ও শ্বশুরমশাইকেই সামলাতে হয়।