শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পের অবলম্বণে অপর্ণা সেনের এই ছবি গয়নার বাক্স। দুর্দান্ত অভিনয়ে প্রথম স্থানেই রাখতে চাইব মৌসুমী চ্যাটার্জী কে যে মিত্র বাড়ির পিসিমার (রাসমনি) চরিত্রটি খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এগারো বছর বয়সে বাল্য বিবাহের পর বারো বছর বয়সেই সব কিছু খুইয়ে বৈধব্য জীবনের যন্ত্রণাটা তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে সমর্থ হয়েছেন। একটি মেয়ের ইচ্ছে ও অনিচ্ছে তিনি মুখের ভাব ও ভাষা দিয়ে অত্যন্ত নিপুণতার সাথে সবাইকে বোঝাতে পেরেছেন। তার বয়স কালে একটি মাত্র সম্বল ছিল তার গয়নার সেই কাঠের বাক্সটা। তাকে পাশে নিয়েই দিন কাটাতেন; কখনো বা পরে একটু সেজে নিতেন আবার কখনো হাতে ওজন আন্দাজ করে কাগজে লেখা মিলিয়ে পুরে রাখতেন ওই বাক্স তেই।
কঙ্কনা সেন শর্মা (সোমলতা) মিত্র পরিবারের ছোট বউ হয়ে আসে শাশ্বত চ্যাটার্জী হাত ধরে। সে কালের নিয়ম নিষ্ঠা মেনে ছোট বউ ভালই মন জয় করেছিল পিসিমার। সে তার গয়নার বাক্সের দায়িত্ব সোমলতার হাতে দিয়ে যান এবং সেই সাথে সাবধানও করে দেন যেন ভাইপো পিযুষ গাঙ্গুলীর ভাগ্নী অপরাজিতা আঢ্য টেরটিও না পায় বাক্সের। পিসিমার ভূত ছবিটিকে আলাদা মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। ভয় নয় , কিন্তু হাস্য-কৌতুকের সৃষ্টি করেছে। সোমলতা প্রমান করেছে যে একটি মেয়ে গৃহবধূর দায়িত্ব পালন করেও সংসারে অন্ন যোগাড় করতে কতটা সক্ষম নিজের বুদ্ধি ও ধৈর্য্য দিয়ে। পিসিমা যথেষ্ট সাহায্য করেছেন অবশ্য। 'রাসমনি' নামে দোকান দিয়েছিল সোমলতা। সেটা শুনে পিসিমার প্রতিক্রিয়া যে কেমন হয়েছিল সেটা বলাই বাহুল্য। এরই মধ্যে সেই গয়নার বাক্সটা হাত বদল হয়ে শেষে আসল সোমলতার মেয়ে চৈতালির মানে শ্রাবন্তী চ্যাটার্জীর কাছে। অবিকল সেই পিসিমার যৌবনের রূপ। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদেরও সাহায্য করে সেই গয়নার বাক্স, অবশ্য পিসিমার তত্ত্বাবধানে। ছবিটির প্রতিটি মূহুর্ত ফুটিয়ে তোলা এবং পরস্পরের কথোপকথন এতটাই প্রশংসনীয় যে আকাশ ছুঁয়ে গেছে অপর্ণা সেনের উৎকর্ষতা। প্রাণবন্ত সম্পাদনা চলচ্চিত্রটিকে উপযুক্ত জায়গায় নিয়ে গেছে। দেবজ্যোতি মিশ্রর সঙ্গীত মন ছুঁয়ে যায়।
LIGHTS... CAMERA... ACTION