Cooch Behar Chronicles 2013 Issue | Page 20

জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা

" রথযাত্রা লোকারণ্য মহাধুমধাম

ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম

রথ ভাবে আমি দেব পথ ভাবে আমি

মূর্ত্তি ভাবে আমি দেব হাসে অন্তর্যামী..."

রথ সম্পর্কে এই উক্তিটি ছোটোবেলা থেকে শুনে আসছি।বহুবার স্কুলে এর ভাব সম্প্রসারণ ও করেছি। কিন্তু পুরীর রথ দেখবার আগে এর পুরো তাৎপর্য্য অনুধাবণ করতে পারি নি।সত্যি সত্যি পুরীর রথযাত্রায় এবার গিয়ে এই উক্তির পূর্ণ তাৎপর্য্য কিছুটা হলেও হৃদয়ঙ্গম হয়েছে।

প্রৌঢ়ত্বের প্রাঙ্গনে এসে ভাগবত পাঠ শ্রবণ করতে করতে কোন একদিন পেলাম "রথারূঢ় জগন্নাথ দর্শনে পূনর্জন্ম ন ভবতি।"-এই বিশ্বাস ও আশা নিয়ে এবার রথারূঢ় জগন্নাথ দর্শনের অভীপ্সা নিয়ে সস্ত্রীক পুরী গমন করি।নবদ্বীপ থেকে কিছু যাত্রী উঠেছিলেন যাদের সাথে আলোচনা করে শ্রীধাম সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারি।তারা অনেক ভোগ্য সামগ্রী নিয়ে ট্রেনে উঠেছিলেন।যেমন - কচুশাক, মোচা, থোর, নানা ফলমূল আরও কত কি! পরে প্রশ্ন করে জানলাম-এগুলো "রাঘবের ঢালি"। তারা স্টেশন থেকে মাথায় করে টোটো গোপীনাথ মন্দিরে এবং গম্ভীরায় নিয়ে যাবে।

পরের দিন ৮ই জুলাই আমরা পুরীধামে পৌঁছোই।দুপুরে টোটা গোপীনাথ জীকে দর্শন করে মন্দির পার্শ্বস্থ কুঞ্জে প্রসাদ নিতে যাই।গিয়ে দেখি সেখানে সন্ত সেবার বিপুল আয়োজন।প্রথম ১০০০ জন সন্ত দের প্রত্যেককে ধুতি ও উত্তরীয় এবং ভোজন-দক্ষিণা দেওয়া হয়।পরে অগণিত ভক্ত ও দর্শক বৃন্দের সাথে আমরা প্রসাদ খেলাম।পরে জেনেছিলাম ভান্ডারার আয়োজক ছিলেন বৃন্দাবন থেকে আগত মুরারী বাবা যিনি তিনকড়ি আশ্রমের সেবাইত।

পরেরদিন ৯ই জুলাই আমরা সকালে সমুদ্র স্নান করে বাল্যভোগের প্রসাদ গ্রহণ করে গেলাম গুন্ডিচা মন্দিরে 'গুণ্ডিচা মার্জন' ওদর্শনের জন্য।'গুণ্ডিচা মার্জন' রথ যাত্রার একটি অঙ্গ বলা হয়ে থাকে।ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সমস্ত ভক্তবৃন্দ মিলেমিশে গুণ্ডিচা মার্জন করেন-জগন্নাথ দেবের আগমণ উপলক্ষে।

"পরদিন ১০ই জুলাই রথযাত্রা"- আমরা সকাল ১১টা নাগাদ মন্দির প্রাঙ্গনে পৌঁছলাম।প্রকৃতপক্ষেই সেখানে তখন লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশ।অপরূপ সাজে সজ্জিত তিনটি রথ সারিবদ্ধ ভাবে দণ্ডায়মান-জগন্নাথ দেবের রথ 'নন্দী ঘোষ', বলভদ্রের রথ 'তালধ্বজ' এবং সুভদ্রার রথ 'দেবদলন' বা 'দর্পহরণ'। নিয়মমত পূজা ও আরতি ইত্যাদি সম্পন্ন হওয়ার পর রথযাত্রা শুরু হল বিকেল চারটা নাগাদ।পুরীর মহারাজা রথের সম্মুখস্থ রাস্তা সোনার ঝাড়ু দিয়ে ধৌত করেন।তারপর লক্ষ লক্ষ ভক্ত রথের রশিতে টান দেন।জয় জগন্নাথ, জয় বলদেব, জয় সুভদ্রা ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়।একটি একটি করে রথ সম্মুখপানে এগিয়ে চলে।প্রথমে যান বলভদ্রের রথ তারপর সুভদ্রার রথ ও সর্বশেষ জগন্নাথ দেবের রথ।

রথের দিন ভগবান জগন্নাথদেব ভক্তদের দর্শন দেন।ভক্তগণের বিশ্বাস

জগন্নাথ স্বয়ং শ্রীকৃষ্ঞ।তিনি পূর্নব্রক্ষ্ম নারায়ণ।তাই ভগবানকে রথারূঢ় অবস্থায় দর্শন করলে তাদের বিষ্ণুপদে স্থিতি হয়।রথযাত্রা পুরীর সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব।এছাড়া জগন্নাথদেবের অন্যান্য উৎসব যেমন-বৈশাখ মাসে চন্দন যাত্রা ,জ্যৈষ্ঠ মাসে স্নান যাত্রা,আষাঢ় মাসে শয়ন যাত্রা।

নবকলেবর অনুষ্ঠানে (১২ বৎসর পর) পুরাতন জগন্নাথ হতে নীলমাধবকে নতুন বিগ্রহের কক্ষপিঞ্জরে প্রতিস্থাপন করেন বয়োজ্যেষ্ঠ পুরোহিত।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোকুল থেকে ব্রজে এসেছিলেন,সেই নিরিখেই পুরী থেকে গুণ্ডিচা যাত্রা বা রথযাত্রা।কটোপনিষদে বলেছেন-আত্মা হল রথী,শরীর হল রথ,বুদ্ধি হল সারথি,মন হল লাগাম।সুতরাং যার বুদ্ধি বিবেকবান,মন সংযত ও যার অন্তকরণ পবিত্র তিনি পরম পদ প্রাপ্ত হন।তাকে সংসারে পুনঃ পুনঃ জন্মগ্রহণ করতে হয় না।

প্রচলিত আছে যে যদি রথের সময় বৃষ্টি হয় এবং সেই বৃষ্টিস্নাত হয়ে কোন ভক্ত রথ দর্শন করেন বা স্পর্শ করেন তবে তার ব্রক্ষ্মহত্যা জনিত পাপ নাশ হয়।

পুরীর রথযাত্রা উৎসব দর্শন করা সত্যিই খুব কঠিন।ভগবানের ইচ্ছা

বা ভক্তের আকুলতা না থাকলে রথদর্শন হয় না।ভগবান যে ভক্তকে কৃপা করেন তার নিদর্শন রয়েছে এই রথযাত্রা অনুষ্ঠানে।

রথের দিন ভগবান জগন্নাথদেব ভক্তদের দর্শন দেন।ভক্তগণের বিশ্বাস জগন্নাথ স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ।তিনি পূর্নব্রক্ষ্ম নারায়ণ।তাই ভগবানকে রথারূঢ় অবস্থায় দর্শন করলে তাদের বিষ্ণুপদে স্থিতি হয়।রথযাত্রা পুরীর সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব।এছাড়া জগন্নাথদেবের অন্যান্য উৎসব যেমন - বৈশাখ মাসে চন্দন যাত্রা , জ্যৈষ্ঠ মাসে স্নান যাত্রা, আষাঢ় মাসে শয়ন যাত্রা।

নবকলেবর অনুষ্ঠানে (১২ বৎসর পর) পুরাতন জগন্নাথ হতে নীলমাধবকে নতুন বিগ্রহের কক্ষপিঞ্জরে প্রতিস্থাপন করেন বয়োজ্যেষ্ঠ পুরোহিত।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোকুল থেকে ব্রজে এসেছিলেন, সেই নিরিখেই পুরী থেকে গুণ্ডিচা যাত্রা বা রথযাত্রা।কঠোপনিষদে বলেছেন-আত্মা হল রথী,শরীর হল রথ, বুদ্ধি হল সারথি, মন হল লাগাম।সুতরাং যার বুদ্ধি বিবেকবান, মন সংযত ও যার অন্তঃকরণ পবিত্র তিনি পরম পদ প্রাপ্ত হন।তাকে সংসারে পুণঃ পুণঃ জন্মগ্রহণ করতে হয় না।

প্রচলিত আছে যে যদি রথের সময় বৃষ্টি হয় এবং সেই বৃষ্টিস্নাত হয়ে কোন ভক্ত রথ দর্শন করেন বা স্পর্শ করেন তবে তার ব্রক্ষ্মহত্যা জনিত পাপ নাশ হয়। পুরীর রথযাত্রা উৎসব দর্শন করা সত্যিই খুব কঠিন।ভগবানের ইচ্ছা বা ভক্তের আকুলতা না থাকলে রথদর্শন হয় না।ভগবান যে ভক্তকে কৃপা করেন তার নিদর্শন রয়েছে এই রথযাত্রা অনুষ্ঠানে।