Cooch Behar Chronicles 2013 Issue | Page 14

ফেরিওয়ালারা সব কোথায় হারিয়ে গেল?

অনেক ছোটবেলায় একজনের কাছে হকার মানে জানতে চাওয়ায় সেই বিজ্ঞ ব্যক্তি আমাদের জানিয়েছিলেন “যার কাছে পয়সা খরচ করে হকের পাওনা বুঝে নিতে হয় তাকেই হকার বলে”। তখন ব্যাপারটার আভ্যন্তরীন অর্থের মর্ম বুঝতে না পারলেও এত বছর পর যখনই সেই কথাটা মনে হয় মনে মনে তাঁর রসজ্ঞানের প্রশংসা না করে পারি না। ছোট থেকেই হকার বা ফেরিওয়ালাদের প্রতি আমার অমোঘ আকর্ষন। মনে হত সব স্বর্গীয় খাদ্যবস্তু আর অসাধারন সব খেলনা গুলো কি মন্ত্রে ঐ ফেরিওয়ালাদের কাছেই পাওয়া যায়? ঠিক বিকেল ৩ টে নাগাদ এক ফেরিওয়ালা আমার বাড়ির সামনে দিয়ে যেতেন – সেটাই সম্ভবত কোচবিহারের ফেরিওয়ালা সম্পর্কে আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। কিছু একটা বলতেন সুর করে, আমি প্রথম প্রথম বুঝতে পারতাম না যে ঠিক কি জিনিস উনি নিয়ে যেতেন। মাকে জিজ্ঞাসা করাতে উনি মুচকি হেসে বল্লেন “ ভালো করে শুনে দ্যাখ বাদামভাজা বিক্রি করছে”। কয়েকদিন ভালো করে শুনে বুঝতে পারলাম, “বাদামভা” পর্যন্ত খুব দ্রুত বলে “জা” টাকে অনেক লম্বা করে প্রায় দশ সেকেন্ড ধরে বলার কারণে ব্যাপারটা আমার কাছে দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছিল। একদিন মাকে ম্যানেজ করে ওর কাছ থেকে বাদাম কিনলাম, সাথে ঝালণুন ! আরো একটি সুস্বাদু জিনিসের সন্ধান পেলাম। যদিও খাবার সময়ে টের পেলাম অর্ধেক বাদামই পচা – এর পর ও যতবারই ওর কাছ থেকে বাদাম কিনেছি ততবারই অন্ততঃপক্ষে চারভাগের একভাগ বাদাম পচা থাকতই। এরপর প্রাইমারি স্কুল ছেড়ে হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ায় বেলা তিনটের সেই নাম না জানা বাদামওয়ালার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল, তারপর কবে থেকে সে যে আর আসে না সেটা খেয়াল ও নেই।

আইসক্রিম নামে যে অতুলনীয় বস্তুটি আমরা পেতাম সেটা লাল অথবা হলুদ বরফের টুকরোতে বাঁশের কাঠি গোঁজা, কিছুক্ষন চোষার পর মিষ্টত্ব বলে আর কিছু থাকত না আর সেই আইসক্রিমের রঙ স্থানান্তরিত হয়ে জিভ রাঙ্গিয়ে দিত। দাম ছিল ১০ পয়সা আর ২০ পয়সা। “আইসক্রিম নর্দমার জলে তৈরী হয়” – এমন সাবধানবানী ছোটবেলায় শোনেননি এমন কাউকে হয়তো পাওয়াই যাবে না। যদিও ওই বয়েসে রাস্তায় মুখ খোলা কলে অবিরাম জল পড়ে চলা দেখতে দেখতে মনে হত জলের এত সহজলভ্য যোগান থাকতে বেচারা আইসক্রিম বিক্রেতাদের কত কষ্ট করে নর্দমা থেকে জল তুলে আইসক্রিম বানাতে হয় ! কিন্তু তৃষ্ণা নিবারণে তার জুড়ি মেলা ভার। এখন আমূল, কোয়ালিটি, ভাডিলাল এসবের কৌলিন্যের কাছে প্রতিযোগিতায় অনেকখানি পেছনের সারিতে চলে গিয়েছে কাঠের বাক্সে ভরে বিক্রি হওয়া সেই বরফ ! সেই আইসক্রিম বিক্রেতারা কখনও সাইকেলের পেছনে কখনও বা সেই কাঠের বাক্সেই হাতল আর চাকা লাগিয়ে সেটাকেই ঠেলাগাড়ির রূপ দিয়ে দিতেন। তারপর সেখানেই পেপসি নামে প্লাস্টিকের খাপে মোড়া বিভিন্ন রঙের বরফ মিলতে লাগল, ওই প্লাস্টিকের যে কোনও একদিক ফুটো করে নিতে হত। তবে প্রথমবার রিক্সায় মাইক লাগিয়ে, সেই মাইকে গান বাজিয়ে আর গানের মাঝে মাঝে তার অতুলনীয় স্বাদ আর গুণের বিজ্ঞাপন সহ হাজির হল তৃষ্ণা আইসক্রিম। ধীরে ধীরে সেই একই পথ ধরে আসল গৌর-নিতাই, বাবুল-নিতাই কুলপি মালাই।

এই কুলপি মালাই ছিল সাধারন বরফের থেকে আলাদা, ছোট ছোট টিনের ছাঁচের মধ্যে ভরা থাকত এই কুলপি। বাক্সের গায়ে বড় বড় করে লেখা থাকত “ খাঁটি গোরুর দুধের দুধ মালাই ও ক্ষীর মালাই। আমার বন্ধু পিন্টুর বরাবরই অনুসন্ধিৎসা বেশী, সে জানতে চেয়েছিল খাঁটি কোনটা – দুধ না ক্ষীর? সেই কুলপি বিক্রেতা অম্লানবদনে বলেছিল – “গোরুটা খাঁটি”। হাইস্কুলে গিয়ে দুজন আইসক্রিম বিক্রেতার সাথে পরিচয় হল – “আশীষদা” আর “মেয়ের বিয়ে দাদু”। সেই মেয়ের বিয়ে দাদু মাঝে মাঝেই মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে চাঁদা সংগ্রহ করত, তার ঠিক কটা মেয়ে সেই আন্দাজ আমরা স্কুল ছাড়ার সময় পর্যন্ত করে উঠতে পারিনি, তাকে অনেকদিন হল দেখিও না। আশীষদাকে এখন নিউ সিনেমা হল এর পাশে পানের দোকান চালাতে দেখা যায়।

হাইস্কুলে আর একটা নতুন খাদ্যদ্রব্যের সাথে পরিচয় হল- বারোভাজা। সেদ্ধ মটরের সাথে পেঁয়াজ, ভাজা মশলা, ঝুড়িভাজা, চিড়েভাজা ইত্যাদি মিশিয়ে তৈরী হত সেই সুস্বাদু খাদ্য। বিক্রেতা ছিল “মামুনি”, বারোভাজার সাথে শীতকালে পাওয়া যেত ছোট ছোট কুল- ছেলেরা নাম দিয়েছিল চাইনিজ কুল, কেন এই নামকরন সেটা আজ পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারিনি, তবে স্কুলের মাঠ ভরে যেত ওই কুলের বিচিতে। মাঝে মধ্যেই সেগুলো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হত। মামুনিকে এখন দেখা যায় স্টেশন মোড় এ সেই বারোভাজা বিক্রি করতে। আর নৃপেন্দ্রনারায়ণ স্কুলের সামনে পাওয়া যেত নানা ধরনের আচার সহ “ঠাকুর” কে। শুধু আচার নয় ঠাকুরের কাছে ফুচকাও পাওয়া যেত। তখনো কোচবিহার শহরে মোরে মোরে ফুচকা একেবারেই সহজলভ্য ছিল না, সামান্য কিছু চাটওয়ালা কাছে মাঝে মধ্যে ফুচকা পাওয়া যেত। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে ঠাকুরের কাছেই নিয়মিত ভাবে ফুচকা পাওয়া যেত। আর খেলার মাঠে দেখা যেত টাইম পাস (এই নামেই পরিচিত ছিলেন)কে। এখনো রাজবাড়ি স্টেডিয়াম এ বা পুলিশ লাইনে খেলার সময়ে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে ওনাকে বাদাম বিক্রি করতে দেখা যায়।

দুপুরের দিকে ঘণ্টাধ্বনি সহ হাজির হত শোনপাঁপড়িওয়ালা, সাথে বুড়ির চুলের মত সোনপাঁপড়ি আর হাওয়াই মিঠাই বা হাওয়া বল। সর্ষের তেলের খালি হওয়া টিনের বাক্সের সামনের দিকে কাঁচ লাগিয়ে আর ভেতরে দুটো ভাগ করে একপাশে সোনপাঁপড়ি আর এক পাশে সাদা আর গোলাপি হাওয়া বল বিক্রি হত, সে মুখে কিছু বলত না, ঘন্টা বাজিয়েই তার উপস্থিতি জানান দিত। এখন বড় বড় মিষ্টির কোম্পানীর সুদৃশ্য প্যাকেটে মহার্ঘ্য সোনপাঁপড়ির স্বাদে আর খুজে পাইনা সেই বুড়ির চুল সোনপাঁপড়িকে। সেই ঘণ্টাধ্বনি মিলিয়ে যেতে না যেতেই –“ দিলখুস, খেলে মন খুশ না খেলে আফসুস” এক বিরাট প্লাস্টিকের বাগের ভিতর দিলখুস পাঁপড় বিক্রেতা চলে আস্তেন।ঐ দুই বিক্রেতা প্রায় প্রত্যেকদিনই একই সময়ে আসতেন, কবে থেকে তারা আর আসতেন সেটা খেয়ালও নেই।

তখন ক্লাস এইট এ পড়ি। একটা মাটির ছোট বাটির ভিতরে ফাটা বাঁশের কঞ্চি আর তার টান করে আর একদিকে বাঁধা এক বিস্ময়কর বাজনা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এক বিক্রেতা। সেই দুটাকার বাজনাটা – কিনে ফেললাম আমি আর আমার ভাইপো, তারপর হাজার চেস্টা করেও কোনও সুর বার করতে পারলাম না, সাথে বাজানোর জন্যে ধনুক সদৃশ একটা ছড় দিয়েছিল, কিছুতেই কিছু হয়নি। সেই বাজনাওয়ালাও কবে কোথায় চলে গেল জানিনা – এখনও তার বিস্ময়কর সেই বাজনা কোথাও পাওয়া যায় কিনা তাও জানিনা। অনেকদিন পর্যন্ত “কাপড়ের বদলে বাসন” বিক্রেতারা ছিলেন। বাড়িতে নতুন বাসন দেখলে আতঙ্কিত হয়ে পরতাম যে এবার আমার কোন জামা বা প্যান্টটা বলিপ্রদত্ত হল। সেই হকার রাও আজকাল সংখ্যায় অনেক কমে গিয়েছেন। তাদের কারো কাছেই দেখেছিলাম ছোটবেলার সেই সুপার হিরো মারাদোনার ছবি দেওয়া টি-সার্ট। মার কাছে বায়না ধরেছিলাম, কিন্তু বাজারে অনেক খুঁজেও কোথাও পাইনি।

হঠাৎ ই মনে হল এই সব মানুষগুলো – যারা ছোটবেলার দুপুরটা জুড়ে ছিলেন তারা যেন কোথায় ভ্যানিশ হয়ে গেলেন সেই জাদুকর ম্যানড্রেক এর মত। কখনও গুলি লজেন্স, কখনও ঝাল আচার আবার কখনও বা তিলের খাজা কিনে আমি সাথে সেই ছোট্টবেলার বন্ধু পিন্টু আর রুমকি মিলে রুমকিদের বাড়ির চিলেকোঠায় বা নেড়া ছাতে বসে আজগুবি সব গল্প করতে করতে সেগুলোর স্বাদে মুগ্ধ হয়েছি। পিন্টু বিদেশে থাকে রুমকিরা এখান থেকে বদলি হয়ে চলে যাবার পর আর দেখাও হয়নি কোনদিন, আর দেখাও হবেনা এই জীবনে। আর ফিরেও পাওয়া যাবে না সেই অসাধারন দুপুরগুলো। এখন বাড়িতে থাকলে বাইক, স্কুটার অটোর আওয়াজ, হর্ণের শব্দের মধ্যেও শোনার চেষ্টা করি সেই হারিয়ে যাওয়া হকারদের উত্তরসূরীদের কোন আওয়াজ।

রাজবাড়ি স্টেডিয়াম (২৩শে জানুয়ারী২০০৮)

এই কুলপি মালাই ছিল সাধারন বরফের থেকে আলাদা, ছোট ছোট টিনের ছাঁচের মধ্যে ভরা থাকত এই কুলপি। বাক্সের গায়ে বড় বড় করে লেখা থাকত “ খাঁটি গোরুর দুধের দুধ মালাই ও ক্ষীর মালাই। আমার বন্ধু পিন্টুর বরাবরই অনুসন্ধিৎসা বেশী, সে জানতে চেয়েছিল খাঁটি কোনটা – দুধ না ক্ষীর? সেই কুলপি বিক্রেতা অম্লানবদনে বলেছিল – “গোরুটা খাঁটি”। হাইস্কুলে গিয়ে দুজন আইসক্রিম বিক্রেতার সাথে পরিচয় হল – “আশিষদা” আর “মেয়ের বিয়ে দাদু”। সেই মেয়ের বিয়ে দাদু মাঝে মাঝেই মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে চাঁদা সংগ্রহ করত, তার ঠিক কটা মেয়ে সেই আন্দাজ আমরা স্কুল ছাড়ার সময় পর্যন্ত করে উঠতে পারিনি, তাকে অনেকদিন হল দেখিও না। আশিষদাকে এখন নিউ সিনেমা হল এর পাশে পানের দোকান চালাতে দেখা যায়।

হাইস্কুলে আর একটা নতুন খাদ্যদ্রব্যের সাথে পরিচয় হল- বারোভাজা। সেদ্ধ মটরের সাথে পেঁয়াজ, ভাজা মশলা, ঝুড়িভাজা, চিঁড়েভাজা ইত্যাদি মিশিয়ে তৈরী হত সেই সুস্বাদু খাদ্য। বিক্রেতা ছিল “মামুনি”, বারোভাজার সাথে শীতকালে পাওয়া যেত ছোট ছোট কুল- ছেলেরা নাম দিয়েছিল চাইনিজ কুল, কেন এই নামকরণ সেটা আজ পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারিনি, তবে স্কুলের মাঠ ভরে যেত ওই কুলের বিচিতে। মাঝে মধ্যেই সেগুলো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হত। মামুনিকে এখন দেখা যায় স্টেশন মোড় এ সেই বারোভাজা বিক্রি করতে। আর নৃপেন্দ্রনারায়ণ স্কুলের সামনে পাওয়া যেত নানা ধরনের আচার সহ “ঠাকুর” কে। শুধু আচার নয় ঠাকুরের কাছে ফুচকাও পাওয়া যেত। তখনো কোচবিহার শহরে মোড়ে মোড়ে ফুচকা একেবারেই সহজলভ্য ছিল না, সামান্য কিছু চাটওয়ালা কাছে মাঝে মধ্যে ফুচকা পাওয়া যেত। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে ঠাকুরের কাছেই নিয়মিত ভাবে ফুচকা পাওয়া যেত। আর খেলার মাঠে দেখা যেত টাইম পাস (এই নামেই পরিচিত ছিলেন)কে। এখনো রাজবাড়ি স্টেডিয়াম এ বা পুলিশ লাইনে খেলার সময়ে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে ওনাকে বাদাম বিক্রি করতে দেখা যায়।

দুপুরের দিকে ঘণ্টাধ্বনি সহ হাজির হত শোনপাঁপড়িওয়ালা, সাথে বুড়ির চুলের মত সোনপাঁপড়ি আর হাওয়াই মিঠাই বা হাওয়া বল। সর্ষের তেলের খালি হওয়া টিনের বাক্সের সামনের দিকে কাঁচ লাগিয়ে আর ভেতরে দুটো ভাগ করে একপাশে সোনপাঁপড়ি আর এক পাশে সাদা আর গোলাপি হাওয়া বল বিক্রি হত, সে মুখে কিছু বলত না, ঘন্টা বাজিয়েই তার উপস্থিতি জানান দিত। এখন বড় বড় মিষ্টির কোম্পানীর সুদৃশ্য প্যাকেটে মহার্ঘ্য সোনপাঁপড়ির স্বাদে আর খুজে পাইনা সেই বুড়ির চুল সোনপাঁপড়িকে। সেই ঘণ্টাধ্বনি মিলিয়ে যেতে না যেতেই –“ দিলখুস, খেলে মন খুশ না খেলে আফসুস” এক বিরাট প্লাস্টিকের বাগের ভিতর দিলখুস পাঁপড় বিক্রেতা চলে আস্তেন।ঐ দুই বিক্রেতা প্রায় প্রত্যেকদিনই একই সময়ে আসতেন, কবে থেকে তারা আর আসতেন সেটা খেয়ালও নেই।

তখন ক্লাস এইট এ পড়ি। একটা মাটির ছোট বাটির ভিতরে ফাটা বাঁশের কঞ্চি আর তার টান করে আর একদিকে বাঁধা এক বিস্ময়কর বাজনা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এক বিক্রেতা। সেই দুটাকার বাজনাটা – কিনে ফেললাম আমি আর আমার ভাইপো, তারপর হাজার চেস্টা করেও কোনও সুর বার করতে পারলাম না, সাথে বাজানোর জন্যে ধনুক সদৃশ একটা ছড় দিয়েছিল, কিছুতেই কিছু হয়নি। সেই বাজনাওয়ালাও কবে কোথায় চলে গেল জানিনা – এখনও তার বিস্ময়কর সেই বাজনা কোথাও পাওয়া যায় কিনা তাও জানিনা। অনেকদিন পর্যন্ত “কাপড়ের বদলে বাসন” বিক্রেতারা ছিলেন। বাড়িতে নতুন বাসন দেখলে আতঙ্কিত হয়ে পরতাম যে এবার আমার কোন জামা বা প্যান্টটা বলিপ্রদত্ত হল। সেই হকার রাও আজকাল সংখ্যায় অনেক কমে গিয়েছেন। তাদের কারো কাছেই দেখেছিলাম ছোটবেলার সেই সুপার হিরো মারাদোনার ছবি দেওয়া টি-সার্ট। মার কাছে বায়না ধরেছিলাম, কিন্তু বাজারে অনেক খুঁজেও কোথাও পাইনি।

হঠাৎ ই মনে হল এই সব মানুষগুলো – যারা ছোটবেলার দুপুরটা জুড়ে ছিলেন তারা যেন কোথায় ভ্যানিশ হয়ে গেলেন সেই জাদুকর ম্যানড্রেক এর মত। কখনও গুলি লজেন্স, কখনও ঝাল আচার আবার কখনও বা তিলের খাজা কিনে আমি সাথে সেই ছোট্টবেলার বন্ধু পিন্টু আর রুমকি মিলে রুমকিদের বাড়ির চিলেকোঠায় বা নেড়া ছাতে বসে আজগুবি সব গল্প করতে করতে সেগুলোর স্বাদে মুগ্ধ হয়েছি। পিন্টু বিদেশে থাকে রুমকিরা এখান থেকে বদলি হয়ে চলে যাবার পর আর দেখাও হয়নি কোনদিন, আর দেখাও হবেনা এই জীবনে। আর ফিরেও পাওয়া যাবে না সেই অসাধারন দুপুরগুলো। এখন বাড়িতে থাকলে বাইক, স্কুটার অটোর আওয়াজ, হর্ণের শব্দের মধ্যেও শোনার চেষ্টা করি সেই হারিয়ে যাওয়া হকারদের উত্তরসূরীদের কোন আওয়াজ।