Cooch Behar Chronicles 2013 Issue | Page 32

অদ্ভূত আঁধার এক: সুচিত্রা ভট্টাচার্য

সুচিত্রা ভট্টাচার্যের 'অদ্ভূত আঁধার এক' আধুনিক মধ্যবিত্ত সমাজকে নিয়ে লেখা একটি সুখপাঠ্য উপন্যাস।মাত্র ৪৯ পৃষ্ঠার এই ছোট্ট পরিধির উপন্যাসটিতে নিঃসন্দেহে একটি গোটা জীবনকে আঁকতে সমর্থ হয়েছেন লেখিকা।

এটি তার 'নয়টি উপন্যাস' সংকলনের একটি। উপন্যাসটি মোট ৯টি পর্বে বিভক্ত এবং প্রত্যেকটি পর্বেই তারিখ ও সময় দেওয়ায় এর মধ্যে বিবৃত জীবন আলেখ্যটির বাস্তব ভিত্তি দৃঢ় হয়েছে।

উপন্যাসের ঘটনাক্রম ৩০শে এপ্রিল রাত ৮টা থেকে ছেদ বিশেষে ৯ই মে ভোর ৫টা।৩০শে এপ্রিল রাত ৮টায় কাহিনীর পটভূমিকার শুরু।কাহিনীর নায়িকা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সুতপা ধর্ষিতা হতে চলেছে।ন্যাচারাল ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে রয়েছে সুতপার টিউশনি করে বেরোনোর আগে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ের উচ্ছ্বাস নৃত্য ও বৃষ্টি।বেরোনোর পর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অন্ধকার ঘুটঘুটে রাস্তা।রাস্তায় চলতে চলতে বন্ধুর বখাটে দাদা কাজল ও তার সাগরেদদের খপ্পরে পরা ও পরিণতি ধর্ষন।এরপর হাসপাতাল, পুলিশ, থানার তিক্ত ও নোংরা অভিজ্ঞতা।ক্রমান্বয়ে কালপ্রিটদের প্রশাসন কর্তৃক আড়াল করার চেষ্টা,কারণ রাজনৈতিক চাপ।এরপর সুতপার বাবা প্রিয়ব্রত ও বাবার বন্ধু অণুতোষের রাজনৈতিক দাদা রমেন সিংহের দোরে অনুগ্রহ ভিক্ষা।প্রতিদানে মিথ্যা আশ্বাস।তবুও অদম্য প্রিয়ব্রত,স্ত্রী শোভনা ওবন্ধুর ক্রমাগত লড়াই।শেষে লড়াই ডি-এম এর দরজা পর্য্যন্ত ঠেকে।ফল হোক বা না হোক মধ্যবিত্তের বৈশিষ্ট্য দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মরিয়া হয়ে ওঠা।উপন্যাসটির মধ্যে হতাশার দেওয়াল ডিঙিয়ে আশাবাদের দামামা বাজায় সুতপার ভাই বাবলু।তার বন্ধু-বান্ধব,ও ক্রমে হিতৈষী-প্রতিবাদী শক্তিকে সমন্বিত করে ধর্ষক ও তার প্রশ্রয় ও আশ্রয় দাতা পুলিশ এবং রাজনৈতিক নেতাদের বিরূদ্ধে অগ্নিগর্ভ শ্লোগান ভরা পোস্টার টাঙানো!তারপর সমবেত জনতার সোচ্চার শ্লোগান বৃষ্টি।একে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক

দুই পক্ষের শ্লোগান লড়াই ও শেষে প্রশাসন ও নেতা রমেন সিংহর নড়েচড়ে বসা।ফল তথৈবচ।আসলে নেতা রমেন সিংহ-এর ছত্রছায়াতেই তো কাজলের মত সমাজবিরোধীরা এইসব পাপ কাজ করে যাচ্ছে;কেননা রমেন সিংহের বাড়ী থেকে বের হবার পথে হঠাৎ সুতপার মা শোভনা তার মেয়ের ধর্ষক কাজলকে জানালা থেকে দ্রুত সরে যেতে দেখে।অথচ একটু আগেই রমেন সিংহকে তারা দেখেছে পাশের ঘরে গিয়ে ও-সি কে অ্যারেস্ট করার জন্য উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে উত্তেজিত কন্ঠে চাপ দিচ্ছেন,যা কিনা পুরোপুরি ছলনা ।

উপন্যাসটি শেষ হয় রমেন সিংহের নেটওয়ার্কেই কাজলকে খুন করে পথের কাঁটা দূর করার মধ্য দিয়ে।লেখিকা শেষপর্যন্ত বলতে চাইলেন কোন ব্যক্তি কাজল নয়,আসলে এক অসুস্থ সমাজ ব্যবস্থা।অসুস্থ সময় এইসকল অসামাজিক কাজের সৃষ্টি করে।সুতপা বা কাজল উভয়েই পরিস্থিতির শিকার মাত্র।উপন্যাসটিতে লেখিকার ভাষা বিন্যাসে পরিমিতি বোধ,সূক্ষ্ম প্রতীকি ব্যঞ্জনায় চরিত্র ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও সর্বোপরি ঘটনার বুনোট প্রশংসার দাবী রাখে।

Photo courtesy of Sourav Chatterjee

FOR THE BOOK WORMS